“বাক্তিগত কথা, কিছু জিজ্ঞাসা ও একরাশ আক্ষেপ”

বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা চার রুমমেট একসাথে থাকি। তার মধ্য দুই জন হিন্দু, দুই জন মুসলিম। ভগবানের অশেষ কৃপায় কোন দিন আমাদের মধ্য ধর্ম নিয়ে কুতর্ক হয় নি। একে অপরের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই আমরা এক সাথে থাকি। এই বছর রমজান মাসে আমার এক রুমমেট হুজুর হয়ে গেছে। নিয়মিত নামাজ-কালাম আর দাড়ি রেখে এলাহি অবস্থা। এখন আর সে আগের মত English movie দেখতে পারে না, নাটক দেখতে পারে না, কার্ড খেলতে পারে না; অথচ তার মনে তীব্র আকাঙ্খা বিরাজিত রয়েছে। তাই মাঝে মাঝে খুব দুঃখ প্রকাশ করে। ওর এই অবস্থা দেখে আমার নিজেরই খারাপ লাগে…। তাই একদিন জিজ্ঞাসা করলাম; “আচ্ছা এত সংযম(!!!) তুমি কিসের জন্য করছো; যেহেতু তুমি আগের মত সব কিছু করতে পারছো না ।

উত্তরে সে আমাকে বলল, “এই জন্মে যদি আল্লার নেক বান্ধা হতে পারি, তাহলে মৃত্যুর পর আল্লা আমাদের জন্য “হুরের” বাবস্থা করবে। এই হুর অর্থ সুন্দরী নারী; যাদের সৌন্দর্য ১০০০গুন বেশি। বেহেশতে একজন পুরুষ minimum ৭০ জন ও maximum ২৫লক্ষ করে হুর পাবে(!!!!!)।” আরও অনেক কিছুই বলল; কিন্তু আমি লিখতে পারলাম না বলে দুঃখিত।

 

পরিশেষে আমার প্রশ্ন হল>> এটাই কি ইসলাম ধর্মের শেষ ঠিকানা। বেহেশতে “হুর” পাওয়ার জন্য ও মজাদার জীবন যাপন করার জন্য এদের এত জিহাদ???? এরা আসলে কি চায়, এরা নিজেরাও জানে না? প্রশ্নগুলো আমরা ওই বন্ধুকেও করলাম। কিন্তু কিছুদিন ধরে হুজুর হওয়ায় সে কোন যথাযথ উত্তর দিতে পারে নাই।

 

[পাদটীকাঃ এই সব কথা শোনার পর খুব কষ্ট ও করুণা হল ওইসব হিন্দু ছেলে মেয়েদের প্রতি যারা আজ নিজ ধর্মের যথার্থ সংস্কারের অভাবে পথহারা, এতিম শিশুর ন্যায় দিকভ্রষ্ট হয়ে মরীচিকার আশায় “সনাতন ধর্ম” ত্যাগ করে।

শ্রী চৈতন্যমহাপ্রভূ’  একটা কথা বলছিল;

“ন ধনং ন জনং ন সুন্দরীং

কবিতাং বা জগদীশ কাময়ে ।

মম জন্মনি জন্মনীশ্বরে

ভবতাদ্ভক্তিরহৈত কী ত্বয়ি।।”

 -‘হে সর্বশক্তিমান ভগবান, ধনসম্পদ সংগ্রহে কিংবা সূন্দরী লাভে আমার কোনই বাসনা নেই । অনুগামী সংগ্রহরও আমার কোন বাসনা নেই ।আমার বাসনা শুধু ইহজীবনে তথা জন্মজন্মান্তরে আপনার প্রেম ভক্তির অহৈতুকী কৃপালাভ যেন করতে পারি’।

  মূলত,  এটাই আমাদের সনাতন ধর্মের মূল উদ্দেশ্য। যার চরম লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তি। সনাতন ধর্ম এমন একটি রুপান্তর প্রক্রিয়া, যা পশুকে মানুষে ; মানুষকে দেবতায় এবং দেবতাকে ঈশ্বরে বিকশিত করে ।]

“হিন্দুদের গণিতচর্চা” – শ্রী জয় রায়

               Image

                     গণিত কথাটির অর্থ হল গণনা সম্পর্কীয় শাস্ত্র। এটি বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান শাখা। গণিতের শুরু কবে ও কোথায় এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। অনেকের মতে গণিতের আদিভূমি মিশর। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে। এর কারণ সেই সময় ব্যাবিলন এবং চীন এর পাশাপাশি আমাদের ভারতবর্ষেও উন্নতমানের গণিত চর্চা হত, যার স্বপক্ষে বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই অনেক পণ্ডিতের মতে ভারতবর্ষই গণিতশাস্ত্রের উৎপত্তি স্থল। প্রশ্ন আসতে পারে এমন দাবি করার পিছনে যুক্তি কী? সিন্ধু সভ্যতাকেই ধরে নেওয়া হয় ভারতের মাটিতে গণিতের পথচলার শুরুর সময়কাল। কারণ, এর আগের কোনো সভ্যতার নিদর্শন আজও আমরা খুঁজে পাইনি। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে যে লিপির নিদর্শন পাওয়া  গেছে তা আজও পাঠ ও মর্মোদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। তাই সে যুগের গণিতচর্চার প্রকৃত স্বরূপ আজও আমাদের অজানা। তবে ধ্বংসাবশেষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন নিদর্শন দেখে একথা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না যে, এই উপত্যকাবাসীদের গণিতজ্ঞান যথেষ্ট উন্নতমানের ছিল। এই সভ্যতার উন্মেষ হয়েছিল ৩৫০০ – ৩৩০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দের মধ্যে। সুতরাং ভারতীয় গণিতই প্রাচীনতম কিনা তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও মিশর, সুমেরীয় বা চীনের থেকে যে পিছিয়ে ছিল না এ কথা অনস্বীকার্য।  

 

 

 

                মূলত, ভারতবর্ষে গণিত এর চর্চা সেই বৈদিক যুগ থেকে হয়ে আসছে। বৈদিক মনীষীগণ দ্বারা গণিতের পরিপূর্ণ চর্চাই ভারতবর্ষের জ্যোতির্বিজ্ঞানকে উৎকর্ষের শিখরে উঠতে সাহায্য করেছিল বলে মনে করা হয়। বৈদিক যুগে গণিতের ভিত্তি বেদে বর্ণিত ১৬ টি সূত্র ও ১৩ টি উপসূত্রে অন্তর্নিহিত ছিল। বৈদিকযুগে মূলতঃ দশমিক পদ্ধতিতেই গণনাকার্য সম্পন্ন হত। যজুর্বেদ সংহিতায়  প্রাপ্ত বিভিন্ন সংখ্যা যেমন; অর্বুদ(১০০০০০০০), নর্বুদ(১০০০০০০০০), সমুদ্র(১০০০০০০০০০), পরার্ধ(১০০০০০০০০০০০০) থেকে জানা যায় যে বিশালায়তন সংখ্যার ধারণাও হিন্দু গণিতজ্ঞদের কল্পনাতীত ছিল না। সমসাময়িক কোনও জাতি সম্ভবত এত বৃহৎ সংখ্যা কল্পনা করতে সক্ষম ছিল না। নিম্নে বর্ণিত সংখ্যাপ্রবাহ দুটিকে লক্ষ্য করা যাকঃ
১,৩,৫,…,৯৯
২৪,৪৮,৯৬,১৯২,………,৩৯৩২১৬
প্রথমটির নাম সমান্তর প্রগতি এবং দ্বিতীয়টির নাম গুণোত্তর প্রগতি। ‘তৈত্তিরীয় সংহিতা’ ও ‘পঞ্চবিংশ ব্রাহ্মণ’ এ যথাক্রমে উপরোক্ত  প্রগতিগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়। এত গেলো পাটিগণিতের কথা। ‘শতপথ ব্রাহ্মণ’ এ হিন্দুদের জ্যামিতিক জ্ঞানেরও পরিচয় পাওয়া যায়। আমরা অনেকেই জানি, বৈদিক যজ্ঞানুষ্ঠানে একটি অন্যতম উপকরণ ছিল ‘মহাবেদী’; যার আকৃতি হল সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম। এই সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম এর ক্ষেত্রফল এবং বাহু-উচ্চতার বিভিন্ন সম্পর্ক হিন্দুরা জানতেন। ঋণাত্মক রাশি সম্পর্কেও তারা অবগত ছিলেন। সংস্কৃত ভাষায় আরেকটি অন্যতম সূত্র হল “শুলভা সূত্র”। শুলভা শব্দের অর্থ দড়ি বা ঐ ধরনের কিছু। এই শুলভা সূত্র ব্যবহার করা হত হিন্দুদের মৃত্যুর পর বেদী তৈরীর কাজে। এটি এক ধরনের বৈদিক জ্ঞান, যেখানে বিভিন্ন ধরনের আগুনে পোড়ানোর বেদীর বিভিন্ন অর্থ তুলে ধরা হয়েছিল। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, যারা স্বর্গে যেতে ইচ্ছুক,  শুলভা সূত্র অনুযায়ী তাদের আগুনে পোড়ানোর বেদী হবে বকের আকৃতির। যারা ব্রাক্ষনদের মত পৃথিবী জয় করতে চায়, তাদের বেদী হত কচ্ছপ আকৃতির। এছাড়া রম্বস আকৃতির হবে তাদের বেদী, যারা অজাতশত্রু হতে চায়! বেদ থেকে প্রাপ্ত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো হল:

  • অপাস্তমব্য
  • বৌধয়ন
  • মানব
  • ক্যাত্যায়ন
  • মৈত্রয়নী (মানব এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ)
  • বরাহ
  • বধূলা
  • হিরন্যকেশ (অপাস্তমব্য এর সাথে সাদৃশ্য পূর্ণ)

এই সূত্রগুলোর বেশির ভাগই আবিষ্কৃত হয় ৮০০ থেকে ২০০ খ্রীষ্টপূর্বে। যাদের মধ্যে সবচাইতে প্রাচীন সূত্র হল বৌধয়ন। মজার ব্যাপার, অপাস্তমব্য ও বৌধয়নের সাথে পীথাগোরাসের সূত্র ও পীথাগোরিয়ান এরীয়র সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি, যেমন চতুর্ভূজ ও বর্গের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেছে বৌধয়নের ভেতর। এছাড়া আছে, একটি সুনির্দিষ্ট জ্যামিতিক ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলকে অন্য একটি জ্যামিতিক ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলে রূপান্তর করার পদ্ধতি। আরো একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এই সূত্রের ভিতর √2 এর মান অত্যন্ত নির্ভুলভাবে বের করার উপায়ও বলা হয়েছে। যা আমরা পানিনি দ্বারা বর্ণিত ইতিহাস থেকে জানতে পারি।

 

 

 

               

                 এরপর প্রায় ১০০০ বৎসর গণিতের মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে হিন্দুদের বিশেষ একটা অবদান লক্ষ্য করা যায় না। পরবর্তীতে আর্যভট্ট্‌(৪৭৬-৫৩০), ব্রহ্মগুপ্ত(৫৮৮-৬৬০ খ্রিঃ),  বরাহমিহির(ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ), গলস্ন (ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম ভাগে), ভাস্কর(ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ ভাগে), মহাবীরাচার্য (নবম শতাব্দী ), শ্রীধর আচার্য (একাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ), শ্রীপতি (একাদশ শতাব্দী), ভাস্করাচার্য (দ্বাদশ শতাব্দী) প্রমুখ মনীষীবৃন্দের কর্মালোকে হিন্দু গণিতশাস্ত্র আবার বিশ্বসভায় নিজের স্থান সুদৃঢ় করে তোলে। গণিতশাস্ত্রে হিন্দু মনীষীদের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য অবদান হল দশমিক স্থানিক অঙ্কপাতন পদ্ধতি ও ‘শূন্য’ এর আবিষ্কার। অবশ্য এর আগে খ্রীষ্টপূর্ব ২০০ তে পিঙ্গলের ‘ছন্দসূত্রে’ শূন্যের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আর্যভট্ট রচিত ‘আর্যভটীয়’ নামক গ্রন্থে দ্বিঘাত প্রথম মাত্রার অনির্ণেয় সমীকরণের সমাধান ও π এর নির্ভুল মান এর উল্লেখ পাওয়া যায়। বর্গমূল নির্ণয়ের পদ্ধতিও আর্যভট্টের আবিষ্কার। এসময়ের আরেকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হলেন ব্রহ্মগুপ্ত। তিনি পিরামিড ফ্রাস্টাম এর আয়তন নির্নয় সম্পর্কিত সূত্র আবিষ্কার করেন। যাঁর কথা না বললে এই লেখা অপূর্ণ থেকে যাবে তিনি হলেন ভাষ্কর। তাঁর লেখা  বিখ্যাত গ্রন্থখানি হল চারখন্ডে সমাপ্ত ‘সিদ্ধান্ত শিরোমণি’। যার প্রথম ২টি খন্ড লীলাবতি ও বীজগণিত এ পাটীগণিত ও বীজগণিত এর বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হয়েছে। “একটি ঋণাত্মক রাশিকে অপর একটি ঋণাত্মক রাশি দ্বারা গুণ করলে ধনাত্মক রাশি এবং একটি ঋণাত্মক ও অপর একটি ধনাত্মক রাশি গুণ করলে ঋণাত্মক রাশি পাওয়া যায়”, বীজগনিতের এই সিদ্ধান্ত ভাষ্কর এর আবিষ্কার। গণিত এর ছাত্র মানেই, “x=(-b±√(b^2-4ac))/2a” সূত্র সম্পর্কে অবগত। যার আবিষ্কারকের নাম শ্রীধর। দ্বিঘাত সমীকরণের মাত্রা নির্ণয়ের এই সূত্রটি ‘শ্রীধরাচার্যের উপপাদ্য’ নামে প্রচলিত। এতো গেল পাটীগণিত ও জ্যামিতির কথা। এরপর ত্রিকোণমিতি। ত্রিকোণমিতিতেও হিন্দুদের সাফল্য অনস্বীকার্য। বরাহমিহির ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’ গ্রন্থে sin30 ও sin 60 এর মান নির্ণয় করে দেখিয়েছেন। বর্তমান ত্রিকোণমিতিতে ব্যবহৃত মূল সূত্রগুলিও বরাহমিহির এর আবিষ্কৃত।

 

 

 

                

                  এই হল আমাদের হিন্দুধর্ম; আমাদের গণিতশাস্ত্র;  যার মাহাত্ম্য, যার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। হাজার হাজার বছর আগে যখন পৃথিবীতে জ্ঞান ও ধর্মকে একত্রিত করা হয়েছিল ঈশ্বরের উপাসনার জন্য, ঠিক তখন থেকেই আমাদের ভারত উপমহাদেশেও জ্যামিতি, গণিত ও ধর্মের বিভিন্ন রীতির সংমিশ্রন ঘটেছিল। সেই সময় হিন্দুধর্ম তথা সনাতন ধর্ম এতটাই সমৃদ্ধশালী ছিল যে, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ভাবতেই অবাক লাগে যে সময় পৃথিবীর অধিকাংশে মানবসভ্যতার ছোঁয়া পর্যন্ত লাগেনি তখন ভারতবর্ষের বিভিন্ন আশ্রমে ঋষিগণ নিমগ্ন ছিলেন বিজ্ঞানের মহাযজ্ঞে। এর কারণ বৈদিক যুগে এদেশের সমাজ ব্যবস্থা মূলত ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। ধর্ম কর্মের জন্য প্রয়োজন হত নানা ধরণের যজ্ঞাদি ক্রিয়া কান্ড। এই যজ্ঞানুষ্ঠানের একটি অপরিহার্য অঙ্গ ছিল যজ্ঞবেদী নির্মাণ। যার জন্যই সংখ্যা ও জ্যামিতির বিভিন্ন বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যই গণিতবিদ ও পুরোহিতদের অনুপ্রাণিত করেছিল গণিতশাস্ত্রকে বিভিন্ন ধর্মবিষয়ক কাজে ব্যবহার করার। আর সেই থেকেই শুরু হয় ভারতবর্ষে হিন্দুদের গণিতচর্চা। এই লেখাটি লিখতে গিয়ে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য আমাকে সংগ্রহ করতে হয়েছে। প্রতি মুহূর্তেই আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি গণিতশাস্ত্রে হিন্দু মনীষীদের অতুলনীয় অবদান দেখে। আর এই জন্যই আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারি, সনাতন ধর্মের প্রতিষ্ঠা হয়েছে জ্ঞানের পথে। ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুক, এই কামনায় এখানেই শেষ করছি।

জয় সনাতন ধর্মের জয়।  

                              ————-সমাপ্ত—————

তথ্যসূত্রঃ

1.ইন্টারনেট

2.ভারতীয় গণিতের ইতিহাস – প্রাচীন ও মধ্যযুগ

 – কমলবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

 

হিন্দু ধর্ম এতো প্রাচীন যে এর ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক থাকা স্বাভাবিক। তবে, মানব সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশের ধারক ও বাহক যে সনাতন ধর্ম এই কথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কালস্রোতে হিন্দু রাজা-মহারাজা রাই একসময় এই ভারতবর্ষ শাসন করতো। কিন্তু, দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, ধর্মাচরন, ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং অন্যান্য স্বার্থসিদ্ধির মোহে এদের মধ্য কোন ঐক্য ছিল না। বরং বিবাদ ও কলহ প্রায় লেগেই থাকতো। আরাম আয়েশ ও ভোগ বিলাসের নিমিত্তে ব্রাহ্মণ ও বণিক শ্রেণিকে খুশি রাখতে গিয়ে তারা প্রজাদের সুখ দুঃখের কোন খবর রাখতো না। চেঙ্গিসখান, কুবলাইখান ও হালাকুখানের বাহিনী যে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাতেও তাদের কোন বোধোদয় ঘটে নি। আর, এরপর তো পশ্চিমা দেশের মোগলরা এসে ক্ষমতাই কেড়ে নিয়ে গেল। একসময় আসলো সেন রাজাদের শাসন কাল। সেই সেন রাজাদের একজন বল্লালসেনই এই দেশে বর্তমান বর্ণভেদের বিষাক্তবীজ বপন করেছিলো। যার পরবর্তী বংশ ধর লক্ষনসেনের ভূমিকা বড়ই লজ্জাকর। এই বর্ণভেদ আজও আমাদেরকে দুর্বল করে রেখেছে। সেন রাজারা বাঙালি ছিল  না। তবুও, বর্ণভেদ প্রথা চাপিয়ে দিয়ে বাঙ্গালীদের শাসন করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এ তো গেল আমাদের পূর্ব পুরুষদের কথা।

 

আর, আজ আমরা অনেক চেষ্টা করছি হিন্দুদের মধ্য ধর্মীয় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। ফলে, হিন্দু ধর্মের প্রচার বা প্রসার কিছুটা হলেও এই বর্ণভেদ আমাদের রক্তে মিশে থাকার জন্য আমরা দুর্বলই থেকে যাচ্ছি। বর্ণভেদের পাশাপাশি আছে, তথাকতিত বিজ্ঞানবাদীদের অসীম যুক্তি। পৌরাণিক যুগে সমুদ্র মন্থনের সময় অমৃতের পাশাপাশি বিষও উঠেছিলো। আজ বিজ্ঞানের বদৌলতে সুখ সাচ্ছন্দের পাশাপাশি যে বিষটি আমাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে তা হল- ঈশ্বরে অবিশ্বাস। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে আমাদের কত যুক্তি, কত জিজ্ঞাসা, কত প্রশ্ন; আজ আমরা বিষের জ্বালায় ছটফট করছি। মারাত্মক বিষ- “ঈশ্বর সত্ত্বায় অবিশ্বাস”। যারা ঈশ্বর মানেন না তাদের কত যুক্তি!! যদি বলা হয়, হরিদাস ঠাকুর দিনে ৩ লক্ষ বার কৃষ্ণ নাম করতো- এই কথা শুনে আজ আমরা ক্যালকুলেটর নিয়ে বসে যাই। এটা কিভাবে সম্ভব!! অথচ, আমরা দেখছি না এই কথাটার পিছনে ভগবানের প্রতি ভক্তের কতটুকু ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। সত্যিই, আমরা অনেক যুক্তিবাদী।

 

আজ ধর্ম সম্পর্কে একটা পোস্ট দিলেই সমস্ত তথাকতিত বিজ্ঞানবাদীরা ছুটে আসে তাদের হাজারো যুক্তির থালা নিয়ে। বিজ্ঞানের আলোয় তারা এতটাই আলোকিত যে, মহাভারত, রামায়ন কে পর্যন্ত অস্বীকার করে। ফেসবুক এ বসে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ঘোষণা, কোথায় ঈশ্বর?? comment এর পর comment, comment এর পর comment করেও তাদের বোঝানো যায় না যে, “ঈশ্বরকে দেখতে হলে চর্মচক্ষু নয়, জ্ঞানচক্ষু প্রয়োজন।”

 

অতীতের পূর্বপুরুষ ও বর্তমানের এই সব বর্ণবাদী ও বিজ্ঞানবাদী পুরুষদের জন্য আজ আমরা এক পা এগোচ্ছি তো দুই পা পিছিয়ে যাচ্ছি। তবুও, আশায় বুক বেঁধে থাকি একদিন সকল কুয়াশা ও অন্ধকার দূর হয়ে প্রকৃত সনাতন ধর্মের প্রতিষ্ঠা হবেই, হবে।

জয় সনাতন ধর্মের জয়।।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শুলভা সূত্র,- জয় রায়

হাজার হাজার বছর আগে যখন পৃথিবীতে জ্ঞান ও ধর্মকে একত্রিত করা হয়েছিল ঈশ্বরের উপাসনার জন্য, ঠিক তখন আমাদের ভারত উপমহাদেশেও জ্যামিতি, গণিত ও ধর্মের বিভিন্ন রীতির সংমিশ্রন ঘটেছিল ঠিক একই উদ্দেশ্যে। সংস্কৃত ভাষায় শুলভা শব্দের অর্থ দড়ি বা ঐ ধরনের কিছু। শুলভা সূত্র ব্যবহার হত হিন্দুদের মৃত্যুর পর বেদী তৈরীর কাজে। এটি এক ধরনের বৈদিক জ্ঞান, যেখানে বিভিন্ন ধরনের আগুনে পোড়ানোর বেদীর বিভিন্ন অর্থ তুলে ধরা হয়েছিল। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, যারা স্বর্গে যেতে ইচ্ছুক, শুল্ভা সূত্র অনুযায়ী তাদের আগুনে পোড়ানোর বেদী হবে বকের আকৃতির। যারা ব্রাক্ষনদের মত পৃথিবী জয় করতে চায়, তাদের বেদী হওয়া উচিত কচ্ছপ আকৃতির। এছাড়া রম্বস আকৃতির হবে তাদের বেদী , যারা অজাতশত্রু হতে চায়! বেদ থেকে প্রাপ্ত সর্বমোট ৮টি সূত্র পাওয়া গেছে। এগুলো হল:

  • অপাস্তমব্য
  • বৌধয়ন
  • মানব
  • ক্যাত্যায়ন
  • মৈত্রয়নী (মানব এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ)
  • বরাহ
  • বধূলা
  • হিরন্যকেশ (অপাস্তমব্য এর সাথে সাদৃশ্য পূর্ণ)

এই সূত্র গুলোর বেশির ভাগই আবিষ্কৃত হয় ৮০০ থেকে ২০০ খ্রীষ্টপূর্বে। এদের মধ্যে সবচাইতে প্রাচীন হল বৌধয়ন। ধারনা করা হয় যে, সংখ্যা ও জ্যামিতির বিভিন্ন বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যই গণিতবিদ ও পুরোহিতদের অনুপ্রাণিত করেছিল এদের বিভিন্ন ধর্মবিষয়ক কাজে ব্যবহার করার।

অপাস্তমব্য ও বৌধয়নের সাথে পীথাগোরাসের সূত্র ও পীথাগোরিয়ান এয়ীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি, যেমন চতুর্ভূজ ও বর্গের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেছে বৌধয়নের ভেতর। এছাড়া আছে, একটি সুনির্দিষ্ট জ্যামিতিক ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলকে অন্য একটি জ্যামিতিক ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলে রূপান্তর করার পদ্ধতি। আরো একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এই সূত্রের ভিতর √2 এর মান অত্যন্ত নির্ভুলভাবে বের করার উপায়ও বলা হয়েছে। পানিনি দ্বারা বর্ণিত ইতিহাসেও এর কথা বলা হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা অনেকদিন আগেই এসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আবিষ্কার করে গণিতের ইতিহাসে অবদান রেখেছেন। শুলভাসূত্রের মতই এই উপমহাদেশে আরও অনেক শাস্ত্র ও বৈদিক আচার রয়েছে, যার সাথে গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের রয়েছে অত্যন্ত গাঢ সম্পর্ক।

 

Hello world!

Welcome to WordPress.com! This is your very first post. Click the Edit link to modify or delete it, or start a new post. If you like, use this post to tell readers why you started this blog and what you plan to do with it.

Happy blogging!