শুলভা সূত্র,- জয় রায়

হাজার হাজার বছর আগে যখন পৃথিবীতে জ্ঞান ও ধর্মকে একত্রিত করা হয়েছিল ঈশ্বরের উপাসনার জন্য, ঠিক তখন আমাদের ভারত উপমহাদেশেও জ্যামিতি, গণিত ও ধর্মের বিভিন্ন রীতির সংমিশ্রন ঘটেছিল ঠিক একই উদ্দেশ্যে। সংস্কৃত ভাষায় শুলভা শব্দের অর্থ দড়ি বা ঐ ধরনের কিছু। শুলভা সূত্র ব্যবহার হত হিন্দুদের মৃত্যুর পর বেদী তৈরীর কাজে। এটি এক ধরনের বৈদিক জ্ঞান, যেখানে বিভিন্ন ধরনের আগুনে পোড়ানোর বেদীর বিভিন্ন অর্থ তুলে ধরা হয়েছিল। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, যারা স্বর্গে যেতে ইচ্ছুক, শুল্ভা সূত্র অনুযায়ী তাদের আগুনে পোড়ানোর বেদী হবে বকের আকৃতির। যারা ব্রাক্ষনদের মত পৃথিবী জয় করতে চায়, তাদের বেদী হওয়া উচিত কচ্ছপ আকৃতির। এছাড়া রম্বস আকৃতির হবে তাদের বেদী , যারা অজাতশত্রু হতে চায়! বেদ থেকে প্রাপ্ত সর্বমোট ৮টি সূত্র পাওয়া গেছে। এগুলো হল:

  • অপাস্তমব্য
  • বৌধয়ন
  • মানব
  • ক্যাত্যায়ন
  • মৈত্রয়নী (মানব এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ)
  • বরাহ
  • বধূলা
  • হিরন্যকেশ (অপাস্তমব্য এর সাথে সাদৃশ্য পূর্ণ)

এই সূত্র গুলোর বেশির ভাগই আবিষ্কৃত হয় ৮০০ থেকে ২০০ খ্রীষ্টপূর্বে। এদের মধ্যে সবচাইতে প্রাচীন হল বৌধয়ন। ধারনা করা হয় যে, সংখ্যা ও জ্যামিতির বিভিন্ন বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যই গণিতবিদ ও পুরোহিতদের অনুপ্রাণিত করেছিল এদের বিভিন্ন ধর্মবিষয়ক কাজে ব্যবহার করার।

অপাস্তমব্য ও বৌধয়নের সাথে পীথাগোরাসের সূত্র ও পীথাগোরিয়ান এয়ীর সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি, যেমন চতুর্ভূজ ও বর্গের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা গেছে বৌধয়নের ভেতর। এছাড়া আছে, একটি সুনির্দিষ্ট জ্যামিতিক ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলকে অন্য একটি জ্যামিতিক ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলে রূপান্তর করার পদ্ধতি। আরো একটি বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এই সূত্রের ভিতর √2 এর মান অত্যন্ত নির্ভুলভাবে বের করার উপায়ও বলা হয়েছে। পানিনি দ্বারা বর্ণিত ইতিহাসেও এর কথা বলা হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা অনেকদিন আগেই এসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আবিষ্কার করে গণিতের ইতিহাসে অবদান রেখেছেন। শুলভাসূত্রের মতই এই উপমহাদেশে আরও অনেক শাস্ত্র ও বৈদিক আচার রয়েছে, যার সাথে গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের রয়েছে অত্যন্ত গাঢ সম্পর্ক।

 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান